আর এম রিফাত,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ১৫৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকার বাজেট বরাদ্দ পেয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা বেশি। নতুন বাজেটের ৭৯ শতাংশই বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পেনশন খাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা, গবেষণাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহে
সন্তোষজনক বরাদ্দ নেই বলে জানা গেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দাবিকৃত ২০০ কোটি ১৪ লাখ টাকার মধ্যে ইবিতে ১৫৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে ইউজিসি। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় দেখানো হয়েছে ৯ কোটি টাকা। ২৮শে জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামের নিকট বাজেট হস্তান্তর করেন। প্রতিবারের মতো এবারো বেশি বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। এ খাতে মোট বরাদ্দ হয়েছে ১০৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ৬৯ শতাংশ। এ ছাড়া পেনশন খাতে বরাদ্দ হয়েছে ১০.৬৩ শতাংশ।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো চিকিৎসা। এ বছর এ খাতের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই কোটি ১৩ লাখ টাকা। যা বাজেটের এক দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে এখানে ৯০ ভাগই ব্যবহার করা হবে চিকিৎসা ভাতায়। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম টাকা থাকছে মেডিকেলের ওষুধ ক্রয়ে। যার কারণে শিক্ষার্থীদের বাজারের সবচেয়ে কমদামী ওষুধসমূহ সরবরাহ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। নতুন বিভাগ খোলায় শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দের এ হার আরো কমবে। চিকিৎসা খাতে এ বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত বলে মনে করেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের নাজিফা সুলতানা এক শিক্ষার্থী জানান, মেডিকেলে যে কোনো ওষুধের জন্য গেলে এক-দুই টাকার টেবলেট দেওয়া হয়। যা আসলে রোগের জন্য অপ্রতিরোধ্য। তাই অসুস্থ হলে মেডিকেলে যাওয়ার আগ্রহ থাকে না।

এদিকে গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে বরাদ্দ প্রায় শূন্যের কোঠায়। যেখানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৮৭ ও শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। গবেষণায় দেওয়া বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই অপ্রতুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরির পরিচালক প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক জানান, গবেষণায় প্রয়োজনীয় কেমিকেল খুবই ব্যয়বহুল। তাই গবেষণার জন্য বছরে যে অর্থ দেওয়া হয় তা দিয়ে এক মাসও গবেষণা চালানো যায় না। ফলে অনেকেই গবেষণায় আগ্রহ দেখান না।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি খাতে দেওয়া হয়েছে ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ। যা মোট বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। যা মাত্র ৪০ লাখ টাকা। হলে বরাদ্দ কম দেওয়ায় সর্বদা নিম্নমানের খাবার খেতে হয় শিক্ষার্থীদের।

সাফায়েত হোসেন আকাশ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন,  কর্তৃপক্ষের উচিত ছাত্রদের কথা সবার আগে চিন্তা করা। হলে খাবারের মানের তুলনায় টাকা বেশি নেয়। হলে যদি ভর্তুকি বাড়ানো হয়, তাহলে একটু স্বস্তি পেতাম। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন খাতেও দেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত বাজেট।

বাজেট নিয়ে কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বরাদ্দ পূর্বের তুলনায় বেড়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী সামনে আরও বাড়ানোর চেষ্টা থাকবে।